Top Menu

Header Ads

জাভাস্ক্রিপ্ট এর ইতিবৃত্ত_


৯০’ এর দশকের গোঁড়ার দিকের কথা। ব্রিটিশ বিজ্ঞানী টিম বার্নাস লি এর হাত ধরে জন্ম হয় ওয়েবের। তখনকার ইন্টারনেট ছিল আজকের ইন্টারনেট থেকে পুরোপুরি ভিন্ন। শুধুমাত্র গবেষণা ধর্মী কাজ ব্যতীত ইন্টারনেটের তেমন একটা ব্যবহার ছিল না বললেই চলে। ইন্টারনেটও ছিল অনেকটায় সাদামাটা।
কিন্তু সে সময়কার কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্র মার্ক এন্ড্রিসন ও এরিক বিনার চিন্তা ভাবনায় ছিল অন্যকিছু। তাদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল ইন্টারনেটকে কিভাবে আরও সহজবোধ্য করা যায় এবং তা সাধারণ মানুষের দোর গোড়ায় পৌঁছে দেয়া যায়। তাদের এই চিন্তা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে তারা একটি ব্রাউজার বানানোর পরিকল্পনা করে। আর সেই পরিশ্রমের ফল সরূপ তারা যৌথ প্রচেষ্টায় আবিষ্কার করেন পৃথিবীর প্রথম গ্রাফিক্যাল ওয়েব ব্রাউজার “মোজাইক (Mosaic)”। ১৯৯৩ সালের শেষের দিকে মোজাইকের একটি ভেটা ভার্সন ইন্টারনেট সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। অল্পতেই তা পুরু বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
তাদের এই অসাধারণ আবিষ্কার তখনকার বিনিয়োগ কারী ব্যক্তিত্ব “সিলিকন গ্রাফিক্সের” প্রতিষ্ঠাতা জিম কার্ক এর নজর কারে। তিনি এই তরুণ প্রতিভাবান ছাত্রকে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। জিম কার্কের কাছ থেকে সুযোগ পাওয়া মাত্রই মার্ক এন্ড্রিসন ও তার টীম ব্যস্ত হয়ে পড়েন মোজাইককে কিভাবে আরও উন্নত ও সর্বোপরি লাভজনক করে তুলা যায় সে প্রচেষ্টায়। প্রজেক্টের একটি নতুন নামও দেয়া হয় – নেটস্কেপ (Netscape)।
এন্ড্রিসন টীম প্রায় বছর খানেক কোডিং এর পর তাদের ব্রাউজার এর প্রথম সংস্করণ – নেটস্কেপ নেভিগেটর ১.০ (Netscape Navigator 1.0) বিশ্বের কাছে উন্মুক্ত করে দেয়। ব্রাউজার টি সবার কাছে এতো জনপ্রিয়তা লাভ করে যে অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই তা মিলিয়ন ডাউনলোড সীমা ছাড়িয়ে যায়।
১৯৯৫ সালের এপ্রিলে ব্রেন্ডন আইচ – (Brendan Eich) নামে এক নতুন সদস্য যোগ হয় এন্ড্রিসন টীমে। নেটস্কেপ নেভিগেটরের জন্য স্কীম নামক একটি প্রোগ্রামিং ভাষা নিয়ে কাজ করার জন্য মূলত তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে তাকে সম্পূর্ণ নতুন একটি প্রোগ্রামিং ভাষা তৈরি করার দায়িত্ব দেয়া হয়। প্রতিভাবান আইচ অল্পেই দিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ নতুন একটি প্রোগ্রামিং ভাষা ডেভেলপ করে সবার সামনে উপস্থাপন করতে সক্ষম হন এবং তা ১৯৯৫ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর নেটস্কেপ ব্রাউজারের দ্বিতীয় সংস্করণ নেটস্কেপ নেভিগেটর ২.০ (Netscape Navigator 2.0) এর সাথে প্রকাশ করা হয়।
প্রথম দিকে ভাষাটির নাম দেয়া হয় মোচা। পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালের সেপ্টেম্বরে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় লাইভস্ক্রিপ্ট। নাম পরিবর্তনের কয়েক দিনের মাথায় ৪ই ডিসেম্বর শেষমেশ এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় জাভাস্ক্রিপ্ট। তখন থেকে এই পর্যন্ত আমরা এই প্রোগ্রামিং ভাষাটিকে জাভাস্ক্রিপ্ট নামেই চিনে আসছি।
এদিকে ১৯৯৬ সালের নভেম্বরে নেটস্কেপ ECMA International (স্ট্যান্ডার্ড নির্ধারণ করে এরকম একটি ইউরোপিয়ান সংস্থা) এর কাছে ভাষাটি উপস্থাপন করে - যার ফল সরূপ ১৯৯৭ সালে জুনে ECMAScript এর প্রথম সংস্করণ বের হয় যা ECMA-262 নামে পরিচিত। তখন থেকেই প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিত বিরতিতে এর নতুন নতুন সংস্করণ বের করে আসছে। ২০১৫ সালের ১৭ জুন ECMA International তার ষষ্ঠ প্রধান সংস্করণ প্রকাশ করে, আনুষ্ঠানিক ভাবে যা ECMAScript 2015 নামে অভিহিত, এবং ECMAScript 6 বা ES6 নামে পরিচিত। তখন থেকেই বাৎসরিক প্রকাশ চক্র অনুযায়ী ECMAScript -এর মান প্রকাশিত হচ্ছে। ECMA International সর্বশেষ জুন, ২০১৭ তে ভাষাটির ৮ম সংস্করণ ECMAScript 8 বা ES8 প্রকাশ করে। জাভাস্ক্রিপ্টের অফিসিয়াল নাম ECMAScript । তবে পাঠকদের বুঝার সুবিধার্থে আমি এই বইয়ে ভাষাটিকে সবার পরিচিত জাভাস্ক্রিপ্ট নামেই সম্বোধন করব।
২০১২ সাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সব নতুন ব্রাউজার ECMAScript 5.1 সমর্থন করে। পুরনো ব্রাউজারগুলো অন্তত ECMAScript 3 সমর্থন করে।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, এতো এতো প্রোগ্রামিং থাকতে জাভাস্ক্রিপ্ট কেন ? যেখানে অন্যরা বিগিনারদের জন্য সি সাজেস্ট করছে সেখানে আমার ডিরেক্ট জাভাস্ক্রিপ্ট ব্যবহারের কারণ কি ?
এর অনেক গুলো উত্তর রয়েছে, তবে সংক্ষেপে বুঝানোর চেষ্টা করছি,
প্রায় সব ভার্সিটিতেই প্রোগ্রামিং এর শুরুটা হয় ভয় দিয়ে। সবে মাত্র কম্পিউটার সাইন্সে ভর্তি হওয়া অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী শুরুতে নিজেদেরকে সি/জাভার সাথে মানিয়ে নিতে না পেরে মনে করে ‘প্রোগ্রামিং! সে তো বিশাল মাপের প্যারা দায়ক জিনিস, এটা অন্তত আমার জন্য না’। ফলস্বরূপ একটা বড় অংশ ধীরে ধীরে প্রোগ্রামিং এর জগত হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু প্রোগ্রামিং শুরুটাই যদি হতো মজা দিয়ে তাহলে এ হার অনেকাংশেই কমে যেত। এরকমই একটি মজার প্রোগ্রামিং ভাষা হচ্ছে জাভাস্ক্রিপ্ট।
জাভাস্ক্রিপ্ট হচ্ছে এযাবতকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষা। শুরুতে ব্রাউজারের কথা মাথায় রেখে জাভাস্ক্রিপ্ট তৈরি করা হলেও বর্তমানে তা ব্রাউজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নই। এর পরিধি এখন সর্বত্র বিরাজমান। মোবাইল অ্যাপ’স, ডেক্সটপ অ্যাপ’স ও গেম ডেভেলপমেন্ট থেকে শুরু করে ইন্টারনেট অব থিংক কিংবা মেশিনে লার্নিং সর্বত্র রয়েছে জাভাস্ক্রিপ্ট এর আনাগোনা। আর ওয়েবে তো জাভাস্ক্রিপ্টের আধিপত্ত্ব অনেকটা ইর্শনীয়।
জাভাস্ক্রিপ্টের উপর ভিত্তি করে অনেকগুলো নতুন প্রোগ্রামিং ভাষা তৈরী হয়েছে, যেমন, Dart, TypeScript, CoffeeScript, ClojureScript, Reason ইত্যাদি। এদের মধ্যে মাইক্রোসফটের TypeScript এবং গুগলের Dart অল্প সময়ে জয় করেছে বহু প্রোগ্রামারের হৃদয়।
আপনি ইচ্ছা করলে আমাদের মাতৃভাষা বাংলাতে কিন্তু প্রোগ্রামিং করতে পারবেন, বাংলা ভাষায় প্রোগ্রামিং এর স্বাদ দিতে ‘পতাকা - Potaka’ নামক প্রোগ্রামিং ভাষাটি ইকরাম, অনিক বিশ্বাস এবং নাহিদ ভাই যৌথ প্রছেষ্টায় তৈরি করেন। ভাষাটি সম্পর্কে আপনার আগ্রহ থাকলে লিংকটি (http://potaka.io) থেকে ঘুরে আসতে পারেন। বাংলা ভাষায় ‘চা স্ক্রিপ্ট’ নামক আরেকটি প্রোগ্রামিং ভাষা রয়েছে। এটি তৈরী করেছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের একদল শিক্ষার্থী। মজার ব্যাপার হলো দুটি ভাষাই জাভাস্ক্রিপ্টে রান করা হয়।
মজিলার ডেভেলপারগন তো জাভাস্ক্রিপ্ট ব্যবহার করে ‘ফারাফক্স ওএস’ নামে পুরু একটি অপারেটিং সিস্টেমই তৈরী করে ফেলেন। জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম এন্ড্রোয়েটের অফিসিয়াল ভাষা Kotlin সাধারণত JDKদ্বারা রান হলেও এর অন্য আরেকটি কম্পাইলার কিন্তু জাভাস্ক্রিপ্ট দিয়ে লিখা। অতএব অদূর ভবিষ্যতে এন্ড্রোয়েট জাভাস্ক্রিপ্টে রান হলে আমি অবাক হবনা।
একসময় জাভাস্ক্রিপ্টে বেশ কিছু সমস্যা ছিল, এতে ইনপুট/আউটপুটের জন্য তেমন ভালো ব্যবস্থা ছিল না, ব্রাউজারের বাইরে সরাসরি মেশিনে কোড রান করা যেত না। মূলত একটি সচল হোস্ট এনভায়রনমেন্টর কথা মাথায় রেখে ভাষাটি ডিজাইন করা হয়েছিল। আমাদের পরিচিত একটি হোস্ট এনভায়রনমেন্ট হচ্ছে ব্রাউজার। শেষমেশ ভাষাটির প্রায় সব সমস্যার সমাধান নিয়ে নোডজেএস (Nodejs) এর আবির্ভাব ঘটে।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত এবং জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষা হওয়া সত্ত্বেও কেন জানি আমাদের দেশের প্রোগ্রামাররা জাভাস্ক্রিপ্টকে প্রোগ্রামিং ভাষা হিসেবে মেনে নিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না।

লিখেছেন - JOSHIM UDDIN

Post a Comment

0 Comments